পশ্চিমবঙ্গ - মোবাইল চুরি এবং ছিনতাই এখন একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও এই ধরনের অপরাধ ঘটছে, কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিরোধের কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অপরাধীরা নির্ভয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, কারণ তারা জানে যে তাদের আটকাতে পুলিশ প্রায়ই ব্যর্থ। কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের সক্রিয়তা দেখা যায়, কিন্তু অধিকাংশ সময়ই তা শুধুমাত্র পিআর এর জন্য।
রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে এই ধরনের র্যাকেটগুলো গড়ে উঠেছে, এবং এগুলো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে নির্ভয়ে। সাধারণ মানুষ ভয়ে ভয়ে রয়েছে, আর অপরাধীরা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি, অযোগ্যতা, এবং নিষ্ক্রিয়তা মিলিয়ে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। পুলিশের কার্যক্রমের ওপর নির্ভরশীলতা কমে যাচ্ছে এবং বাস্তবতা উপলব্ধি করতে হলে সাধারণ মানুষকেই প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে।
মোবাইল ফোন চুরি বা ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে, বেশিরভাগ সময় পুলিশ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এন্ট্রি করিয়ে দেয়, যাতে ঘটনাটিকে মিসিং বা হারিয়ে যাওয়া বলে উল্লেখ করা হয়। এতে পুলিশের এলাকার ক্রাইম রেট কম দেখায় এবং তদন্তের ওপর কোনো চাপ থাকে না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এফআইআর করা গেলে পুলিশের ওপর তদন্তের চাপ তৈরি হয় এবং তাদের জবাবদিহিতা থাকে।
অনেক ক্ষেত্রে, মোবাইল ফোনের IMEI নম্বর ব্যবহার করে ফোনের অবস্থান জানা যায় - নেটওয়ার্ক ভিত্তিক। এছাড়াও গুগল, ফেসবুক, মেটা এবং অন্যান্য অ্যাপগুলোর মাধ্যমে মোবাইলের বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়, যা তদন্তে সহায়ক হতে পারে। টেলিকম অপারেটরদের থেকে গুগল ও মেটার মতো কোম্পানির কাছেও অনেক বেশি ট্রেসেবল ডেটা থাকে।
এমনকি মোবাইল ফোন রিসেট করা হলেও, নতুন যেই একাউন্ট লগ-ইন করুক না কেন ওই গুগল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ফোনের পরবর্তী কার্যক্রম ট্র্যাক করা সম্ভব। CEIR পোর্টাল IMEI মনিটরিং করে, কিন্তু তারও সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যেমন সিম না থাকলে রিপোর্টিং সম্ভব নয়। তবে WiFi, Bluetooth এর মাধ্যমে ব্যবহারিত ডিভাইসের তথ্য গুগলের কাছে থেকে যায়।
বর্তমান প্রযুক্তির যুগে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গ্রাহকের অনেক ব্যক্তিগত তথ্য সহজেই পাওয়া যায়। আগে শুধুমাত্র টেলিকম অপারেটরদের কাছে সীমিত তথ্য থাকত, কিন্তু এখন ব্যাংক এবং অন্যান্য অ্যাপগুলোর মাধ্যমেও প্রচুর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ ধরনের তথ্যগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করে মোবাইল চুরি এবং ছিনতাইয়ের তদন্ত করা সম্ভব, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত অনেক সময়ই এর অপব্যবহার হয়।
এই ধরনের অপরাধ বন্ধ করতে হলে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এফআইআর করতে হবে, এবং তদন্তের প্রক্রিয়া কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। একই সঙ্গে, প্রযুক্তিগত দিক থেকেও যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্ত করা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। একমাত্র এভাবেই সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
– পার্থপ্রতিম দাশ।